1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে আজও নরবলি দেয়া হচ্ছে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১২ মার্চ ২০১৭

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নরবলি বা শিশুবলির মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথা এখনও চলেছে, হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজেই৷ দিন দশেক আগেও কর্নাটকে ১০ বছরের মেয়ে আয়েষাকে বলি দেওয়ার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তার আত্মীয়রা৷

https://p.dw.com/p/2Yxqq
Mexiko Archäologie 50 Schädel in Aztekischem Tempel Templo Mayor gefunden
ছবি: dapd

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঝাড়ফুঁক, মন্ত্রতন্ত্র, জলপড়া বা তান্ত্রিকদের দাপট চলছে দিব্যি৷ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই কুসংস্কারের বলি হচ্ছে অনেক জীবন৷ সহজ নিশানা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাবালক-নাবালিকারা৷ এই তো ১লা মার্চেও ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক মফঃস্বল শহরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ১০ বছরের আয়েষাকে অপহরণ করে বলি দেওয়া হয়৷ আর এই বলি দেয় মেয়েটির নিকট পরিজনেরাই৷

কেন বলি দিয়েছে? এতে করে নাকি মেয়েটির এক অসুস্থ আত্মীয় সুস্থ হয়ে উঠবে৷ ৩রা মার্চ আয়েষার মৃতদেহ উদ্ধারের পর, পুলিশের বয়ানে এমনটাই বলা হয়৷ রামান্নাগ্রামের জেলা পুলিশ এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তসূত্রে গ্রেপ্তার করেছে চারজনকে৷ এরমধ্যে আছেন আয়েষার মামা মহম্মদ ওয়াসিম, যিনি স্থানীয় মসজিদের সেক্রেটারি৷ এছাড়াও আছেন রশিদুন্নেসা, নাসিম তাজ ও ১৭ বছরের এক কিশোর৷

ওয়াসিমের ভাই মহম্মদ রফিক প্যারালেটিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী৷ ভালো হবার আশা নেই৷ এই অবস্থায় নাসিম তাজ নিদান দেয় যে, রফিকের দেহে ভর করেছে প্রেতাত্মা৷ কম বয়সি একটি মেয়েকে বলি দিলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং সেটা করতে হবে ৪০ দিনের মধ্যে৷ এতে প্রভাবিত হয়ে ওয়াসিম নিশানা করে আয়েষাকে৷ আয়েষার ফটো তুলে সে পাঠায় নাসিম তাজের অনুমোদনের জন্য৷

এরপর একদিন আয়েষা যখন তার বাবার দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিল, তখন তাকে অপহরণ করা হয়৷ মুখে কাপড় গুঁজে প্লাস্টিকের টেপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় তার মুখ৷ কাছের একটা গম্বুজের ভেতরে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় তাকে৷ পরে মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে দূরে ফেলে দেওয়া হয়৷

পুলিশ আয়েষার মৃতদেহ ছাড়াও বস্তার মধ্যে পায় ঝড়ফুঁক ও ব্ল্যাক ম্যাজিকের উপকরণ৷ পুলিশ ওয়াসিমের কল রেকর্ড চেক করার পর জেরার মুখে ওয়াসিম অপরাধের কথা স্বীকার করে৷ বাড়ির লোকজন যখন আয়েষার খোজাখুঁজি শুরু করে, তখন ভালো মানুষ সেজে ওয়াসিম তাঁদের সঙ্গ দেয়৷ আয়েষা যাতে নিরাপদে ঘরে ফেরে তার জন্য স্থানীয় মসজিদে দোয়াও করে ওয়াসিম৷ এই নৃশংস ঘটনা চাউর হলে পাড়াপড়শিরা ওয়াসিমের বাড়ির ওপর চড়াও হয়, চালায় ভাঙচুর৷ এবং অবিলম্বে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করে৷

এই নরবলি প্রথা শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই ছিল৷ তবে অতীতে৷ প্রাচীন গ্রিসে দেবতা জিউসের সামনে শিশুবলি দেবার প্রমাণ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ খরস্রোতা নদীর ওপর বাঁধ ও সেতু নির্মাণের আগে কিংবা ঘরবাড়ি তৈরির আগে অশুভশক্তিকে তুষ্ট করতে নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল জাপানে৷ মিশরে ফারাওদের কবরের সঙ্গে বেশ কিছু ক্রীতদাসকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো৷ দক্ষিণ এশিয়াতেও বড় বড় রাজা-মহারাজা বা জমিদারেরা বিশেষ কামনা পূরণের জন্য নরবলি দিত৷ নরমুণ্ড মালিনী, জিবে রক্তধারা, হাতে খাঁড়া নিয়ে দেবি কালীর বা দেবি চামুন্ডার বিগ্রহে অথবা বেদীতে নরবলি ছিল মর্যাদার প্রতীক৷ কালক্রমে এ প্রথাই মোষবলিতে বা পাঁঠা বলিতে নেমে আসে৷ হিন্দু পুরাণেও অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো নরমেধ যজ্ঞের উল্লেখ আছে৷ কিন্তু এই একবিংশ শতকেও নরবলি?

যুক্তিবাদীরা মনে করেন, এর বড় কারণ অশিক্ষা আর দারিদ্র৷ অন্ধবিশ্বাসে চালিত হয়ে এরা ভাগ্যের ওপর সব কিছু ছেড়ে দেয়৷ আর সেই সুযোগটাই নেয় তান্ত্রিকরা৷ নানা রকমের ঝাড়ফুঁক, কবজ-তাবিজ, পশুবলি, এমনকি নরবলি কিংবা শিশুবলি দিয়ে ভাগ্য ফেরাবার অথবা গুপ্তধন পাবার পরামর্শ দিয়ে থাকে তারা৷ এটা এখনও চলছে৷ পুলিশ প্রশাসন এটা বন্ধ করতে তেমন গা করছে না৷ পশ্চিম উত্তর প্রদেশেও গত চারমাসে বেসরকারি হিসেবে ২৮টি নরবলি বা শিশুবলির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় এক সংবাদপত্র সূত্রে জানা গাছে৷

এ বিষয়ে মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভা এক অধ্যাদেশ জারি করে সম্প্রতি৷ এতে নিষিদ্ধ করা হয় মানুষকে শারীরিক এবং আর্থিক ক্ষতি করে এমন সব ব্ল্যাক ম্যাজিক ও আঘোরি প্রথা৷ এর আগে নরবলি এবং ঐ ধরনের কুপ্রথা রোধে একটি বিল আনা হয়েছিল, যেটা ঝুলেছিল গত ১৮ বছর ধরে৷ আইন হতে পারেনি বিধায়কদের দোনামনায়৷ কিন্তু কেন? পাছে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির উষ্মার কারণ হয়৷ বিজেপি ও মৌলবাদী শিবসেনার মতে, বিলে স্রেফ হিন্দুদের নিশানা করা হয়েছে৷ তাই এর বিরোধিতা করেছেন হিন্দু ধর্মীয়গুরুরা৷ এতে নাকি তাঁদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে৷ নেতা-মন্ত্রীদেরও যে ভিন্ন ভিন্ন গুরু আছে!

মহারাষ্ট্র সরকার অবশ্য নড়েচড়ে বসে যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভলকরের হত্যাকাণ্ডের পর৷ দাভলকর এই বিল পাশ করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন৷ রাজ্যপালের সইয়ের পর এই অধ্যাদেশে কার্যকর হয়৷ অধ্যাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ১২টি কুসংস্কার-ভিত্তিক অন্ধপ্রথা৷ যেমন দুষ্ট আত্মা ভর করার বিশ্বাস, চলতি কথায় যার অর্থ ভূত তাড়ানোর নামে নানা ধরনের দৈহিক পীড়ন৷ এছাড়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রথার নামে যৌন লালসা মেটানো, মলমূত্র খাওয়ানো ইত্যাদি৷ নিষিদ্ধ হয়েছে ফিটের ব্যামো বা মানসিক অসুস্থতায় ডাক্তারি চিকিত্সায় বাধা দিয়ে ওঝা ও গুণিনদের পয়সা রোজগারের ধান্দা এবং অবশ্যই নরবলি৷ এইসব বিধিনিষেধ অমান্য করলে ছ'মাস থেকে সাতবছর পর্যন্ত জেল এবং পাঁচ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে৷ তবে যেসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যক্তির দৈহিক বা আর্থিক ক্ষতি হবে না, সেইসব এই অধ্যাদেশের আওতায় আসবে না৷

ভারতে আজও নরবলি হয় – এ কথা কি আপনার বিশ্বাস হয়? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য