1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি: ভারসাম্যে জটিলতা

৮ মে ২০২৩

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের কূটনীতির কেন্দ্রে রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার৷ কিন্তু প্রায়শই তা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে মিলছে না৷

https://p.dw.com/p/4R30e
আনালেনা বেয়ারবক
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance

২০২১ সালের শেষদিকে সরকার গঠনের পর থেকে জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি, গ্রিন পার্টি ও মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি দলের জোট সরকার ‘মূল্যবোধ কেন্দ্রিক' পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ গ্রিন পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ যখনই তিনি বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, তিনি এই মূল্যবোধের কথা বলছেন৷ যেসব দেশে এসব মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তাদের যেমন তিনি প্রশংসা করছেন, তেমনি যারা করছে না, তাদের তীব্র সমালোচনাও করছেন৷ দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন৷ গত মাসে তিনি চীন সফর করেছেন৷

তবে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গাং যৌথ সংবাদ সম্মেলনেই বেয়ারবকের ‘বকা'র জবাব দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আপাতত পশ্চিমের কোনো স্কুলশিক্ষক প্রয়োজন নেই চীনের৷''

বেয়ারবককে শুধু চীনেই নয়, তার বক্তব্যের জন্য সমালোচনা শুনতে হয়েছে নিজ দেশেই৷ বলা হচ্ছে, তিনি বরং জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগীর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব দেখিয়েছেন৷

অনেকে আবার কোনো কোনো ইস্যুতে জার্মানি ঠিকমত শক্ত অবস্থান দেখাচ্ছে না বলেও সমালোচনা করছেন৷ যেমন, ইরানে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জার্মান-ইরানি নাগরিক জামশিদ শার্মাদের ব্যাপারে জার্মানি শক্ত অবস্থান নেয়নি বলে অভিযোগ আছে জামশিদ কন্যার৷

ভারসাম্য রক্ষা

মূল্যবোধ ও স্বার্থের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ নয় বলে মনে করেন বার্লিন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ও সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের সাব সাহারা আফ্রিকান বিশ্লেষক ক্যারোলিন আইকহফ৷

‘‘যখন বৈদেশিক সম্পর্কের সিদ্ধান্তগুলো মূল্যবোধ ও স্বার্থের মাঝে সম্পর্ক তৈরি করে, তখনই কেবল তা প্রাসঙ্গিক হয়,'' বলেন তিনি৷

শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নও মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে৷ যেমন, উন্নয়ন সহায়তা দেবার ক্ষেত্রে তারা অংশীদার দেশের দুর্নীতি, নারীর প্রতি সহিংসতা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে নজর রাখে৷

কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলো তা ভিন্নভাবে দেখে৷ যেমন, চীন ও রাশিয়া অস্ত্র দেয়া এবং অবকাঠামো বিনিয়োগের জন্য অংশীদার দেশে গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ধার ধরে না৷

পররাষ্ট্রনীতিতে কপটতা

জার্মানভিত্তিক ফ্রিডরিখ নাউমান ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে খুশি৷ তারা ইউরোপের নীতিকে ‘পিতৃতান্ত্রিক' মনে করে৷ ইউরোপের পররাষ্ট্রনীতিতে কপটতার অনেক নিদর্শনও দেখা যায়৷

‘‘আফ্রিকার দেশগুলোতে মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপের অঙ্গীকার প্রশ্নের মুখে পড়ে যখন অভিবাসন ইস্যুতে তাদের অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন আইকহফ৷

তবে আফ্রিকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের জবাবে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে জি-৭ দেশগুলো গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে আরো সক্রিয় সম্পর্ক তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে৷

রাশিয়ার বিরুদ্ধে মিত্রের খোঁজে

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে মূল্যবোধভিত্তিক বন্ধুত্ব বা সহযোগিতা পরীক্ষার মুখে পড়েছে৷ এই যুদ্ধ শক্তিশালী দেশ কর্তৃক একটি দুর্বল দেশ ও তার সীমানার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের উদাহরণ তৈরি করেছে৷ অথচ ব্রাজিল বা ভারত, যাদের ইউরোপ বন্ধু বলে মনে করে, তারা জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি৷

‘‘এই দেশগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থই দেখছে না, বরং দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করছে,'' বলেন হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইয়োহানেস ফারভিক৷

তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে এখন গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের যে নতুন বৈশ্বিক সংঘাত তৈরি হয়েছে, সেখানে খুব কম দেশই জড়াতে চায়৷''

এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য ফ্রান্সও এই মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ সম্প্রতি চীন সফর থেকে ফিরে দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ তার ইউরোপীয় সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা এমন সব সংকট থেকে দূরে থাকে ‘যেগুলো তাদের নয়'৷

ক্রিস্টফ হাসেলবাখ/জেডএ