1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তরুণ প্রজন্মের বঙ্গবন্ধু পাঠ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ আগস্ট ২০২৩

বাংলাদেশের এই সময়ের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পাঠে আগ্রহ বাড়ছে৷ আর তাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচা বই দুইটির প্রতি৷

https://p.dw.com/p/4VCRU
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি (ফাইল ফটো)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি (ফাইল ফটো)

তরুণ প্রজন্মের যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তারা সবাই এই বই দুইটি পড়েছেন৷ তারা জানিয়েছেন, তাদের বন্ধু ও সহপাঠীদের অনেকেই বই দুইটি কম বেশি পড়েছেন৷ এমনকি বই দুইটি নিয়ে তারা স্ট্যাডি সার্কেলও করেন৷ ওই বই দুইটি থেকে তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নির্মোহভাবে জানতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তারা৷

পারিসা মেহজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন বড় হয়ে উঠেছি তখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন রেডিও এবং পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে পেরেছি৷ ডকুমেন্টারি , ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও জেনেছি৷ তবে জানার আগ্রহকে পরে বাড়িয়ে তুলেছে দুইটি বই ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এবং ‘কারাগারের রোজনামা৷' ওই দুইটি বই আমাকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে৷ এরপর আরো জানার চেষ্টা করছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমি বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে পারছি একজন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক এবং গণমানুষের নেতা হিসেবে৷ আর এই কারণেই তার পক্ষে একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়া সম্ভব হয়েছে৷''  তবে তিনি মনে করেন, তার অভাব এখন সবচেয়ে বেশি অনুভব করা যাচ্ছে৷ কারণ ওই তিনটিরই অভাব এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ তিনি যে স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা বলেছেন সেখানে আমরা যেতে পারিনি৷

‘আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা স্টাডি সার্কেল করি’

তার মত, ‘‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন৷ আমরা দেখছি সেই প্রবাদটিই এখন আমাদের জন্য বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ এখনো স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি সক্রিয়৷ কাঙ্খিত গণতন্ত্র আমরা এখনো পাইনি৷''

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজির শেষ বর্ষের ছাত্র পিয়াল দাস অনুপ বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি৷ আমরা শুনেছি, তার সম্পর্কে জেনেছি৷ সাধারণ মানুষের জন্য তার দরদ, তার গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব আমাকে আকর্ষণ করে৷ আমি অবাক হয়ে যাই একজন নেতা কীভাবে পুরো জাতিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধাপে ধাপে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন৷ ৭০-এর নির্বাচনের পর তিনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারতেন৷ কিন্তু তিনি তা না করে বিচক্ষণতার সঙ্গে জাতিকে নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়েছেন৷''

অনুপ বলেন, ‘‘আমি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়েছি৷ যত পড়ি ততই তার প্রতি আকৃষ্ট হই৷'' তার মত, বঙ্গবন্ধু যে আদর্শিক নেতৃত্বের পথ আমাদের দেখিয়েছেন তার প্রয়োজনীয়তা কখনোই শেষ হবে না৷ আমরা তার চিন্তার গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না৷ সেটার জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পুরোপুরি বাস্তবায়ন৷

‘দুটি বই আমাকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টর্সের শিক্ষার্থী মো. রেজাউল আলম বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ অনেক৷ আর এই আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে৷ তার যারা সমালোচক তারাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানছেন৷ জানার চেষ্টা করছেন৷ আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা স্ট্যাডি সার্কেল করি৷ তাতে নানা বিতর্ক হয়৷  কিন্তু তা সবই হয় বঙ্গবন্ধুকে জানার আগ্রহ থেকে৷  বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পড়ানো হয়৷''

তিনি বলেন, আমার বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সেই গণতন্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার জন্যই৷ কিন্তু আমার মনে হয় সেই জায়গায় আমারা তেমন এগোতে পারিনি৷

বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি এখনো অধরা

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচ আসামি এখনো দেশের বাইরে পলাতক আছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থান জানলেও বাকি তিনজনের অবস্থান জানে না৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী ক্যানাডায় আছেন৷ বাকিদের অবস্থান আমাদের জানা নেই৷''  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘ওই দুইজনকে ফেরত আনার জন্য ইন্টারপোলসহ দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনা এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুরোধ জানানোর পরও তাদের ফেরত পাওয়া যায়ন৷ তারপরও চেষ্টা চলছে৷''

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান জানা ও তাদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে এক সময়ে কাজ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডা ফেরত দেবে না৷ তাদের দেশে ফাঁসির বিধান নেই৷ এটা ধরে তারা বলছে ওই দুইজন যেহেতু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাই তারা তাদের ফেরত দিতে পারে না৷ তবে এই দণ্ড নিয়ে একটা নেগোশিয়েট করা যায়৷ কিন্তু তারা তাতেও রাজি নয়৷ ফলে আমার মনে হয়েছে তারা আসলে ওই দুইজনকে ফেরত দিতে চায় না বা ফেরত দেবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাকি যে তিনজন শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আব্দুর রশিদ ও মোসলেম উদ্দিন এরা পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী৷ লিবিয়ার বেনগাজিতে তাদের একটি অবস্থান আমার জানা ছিলো৷ কেনিয়ার নাইরোবিতে ডালিমের ব্যবসা এখনো আছে৷ তারা এখন পাকিস্তান—নাইরোবিতে যাতায়াত করে৷ আগে ইটালিতে যেত, কিন্তু এখন পারে না৷ তাদের একটা বাড়ি ছিলো সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷  লন্ডনেও একটা বাড়ি ছিলো সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷''

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়৷ তারা হলেন, মেজর(অব.) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন, কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান৷

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লে. কর্নেল(অব.)আব্দুল আজিজ পাশা মারা যান জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায়৷ ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল পলাতক আসামি  ক্যাপ্টেন (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল মাজেদকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়৷ ওই বছরের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়৷