1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধা

হোসাইন আব্দুল হাই১৪ নভেম্বর ২০১২

মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে ডিডাব্লিউ-এর কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন সাহসী ও ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা তাহরীমা চৌধুরী৷ এমনকি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কলেজ ছাত্রীনিবাসে মেয়ের আবাসনের জন্য উৎকোচ দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি৷

https://p.dw.com/p/16iho
ছবি: Md Alauddin

হাপানিয়া শিবির থেকে তাহরীমাসহ ১৪ জন মেয়ে জিবি এবং বিএম হাসপাতালে গিয়ে নার্সিং স্কোয়াডে যোগ দেন৷ সেখানে তাঁরা সেবিকা হিসেবে কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন৷ সেখানে কাজের কথা স্মরণ করে তাহরীমা জানান, ‘‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি ভেতরে, বাইরে, বারান্দায়, বিছানায়, মেঝেতে শত শত আহত এবং অসুস্থ নারী-পুরুষ৷ আমার বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর৷ আমার পক্ষে এসব দৃশ্য দেখে সহ্য করা খুব কঠিন ছিল৷ তবুও নিজেকে সামলে নিলাম৷ সেখানে আমাদের ওষুধের মাফ-জোখ, কীভাবে ড্রেসিং করতে হয়, কীভাবে সেলাই করতে হয়, হাড় ভেঙে গেলে কীভাবে প্লাস্টার করতে হয় এসব কিছু শেখানো হয়৷ আমরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে কাজ করতাম৷ এভাবে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের উদয়পুর শিবিরে পাঠানো হয়৷''

Freiheitskämpferin Tahrima Chowdhury und ihre Familien
সপরিবারে তাহরীমা চৌধুরীছবি: Md Alauddin

হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ের একদিনের স্মরণীয় ঘটনা জানাতে গিয়ে তাহরীমা চৌধুরী বলেন, ‘‘একদিন দেখলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা ভাইকে ধরাধরি করে আনা হচ্ছে৷ তার পেটটা গামছা দিয়ে বাঁধা৷ এরপরেই দেখি আরো একজন আহত মুক্তিযোদ্ধাকে আনা হলো৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাঁচ-ছয় জন আহত মুক্তিযোদ্ধাকে হাসপাতালে আনা হলো৷ তাদের মধ্যে দ্বিতীয় জনকে সেলাই করার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হলো৷ সেলাই করার জন্য পায়ে হাত দিয়ে দেখি, তার পায়ের হাড়টি নেই৷ গোলার আঘাতে উড়ে গেছে৷ কিন্তু চামড়াটা শুধু ঝুলছে৷ আর অঝোরে রক্ত ঝরছে৷ তার এরকম অবস্থা দেখে আমারই প্রায় অজ্ঞান হওয়ার দশা৷ মনে হলো আমার মাথার উপর থেকে আকাশটা সরে গেছে৷ তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আমি নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হই৷ এরপর আমি তার ঝুলে থাকা চামড়া সেলাই করি এবং ড্রেসিং করে দিই৷ এছাড়া এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছি যাদের হাত নেই, চোখ নেই কিংবা পেটের ভুড়ি বের হয়ে গেছে৷ সেখানকার যে আহাজারি, চিৎকার আর কষ্টগুলো দেখেছিলাম এখনও সেগুলো যেন আমার চোখের সামনে ভাসে৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন করে লেখাপড়া শুরু করেন তাহরীমা৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ কিন্তু এরপরেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়৷ তবুও প্রথমে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকায় এবং পরে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরি করেছেন৷ এছাড়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটিতে থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন তাহরীমা৷ বর্তমানে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি৷ ২০০২ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পেলেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে সময় লেগেছে আরো ৫/৬ বছর৷

Week 46/12 Women 1: Tahrima Chowdhury Part 2 - MP3-Mono

এক মেয়ে ও দুই ছেলের জননী তাহরীমা৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও ঢাকায় ইডেন কলেজ ছাত্রীনিবাসে মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করতে নেত্রীদের ৮ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে বলে কষ্টের কথা জানালেন তাহরীমা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার মেয়েটা স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে শেষ বর্ষে রয়েছে৷ কিন্তু দীর্ঘদিন কলেজ ছাত্রীনিবাসে জায়গা হয়নি তার৷ ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যাওয়া আসা করে লেখাপড়া করেছে৷ আমি মেয়েটার আবাসনের জন্য অনেকের কাছে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি৷ কিন্তু কেউ কিছু করেনি৷ শেষ পর্যন্ত বছর দুয়েক আগে এক নেত্রীর মাধ্যমে আট হাজার টাকা দিয়ে অনেক চেষ্টা-তদবির করে মেয়ের জন্য ছাত্রীনিবাসে আবাসন সুবিধা করে দিতে পেরেছি৷''

স্বাধীন দেশের ৪১ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের কতোটা মূল্যায়ন হয়েছে - এমন প্রশ্নের উত্তরে তাহরীমা চৌধুরী বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর আমাদের কোন মূল্যায়ন হয়নি৷ বিশেষ করে আমরা যারা নারী মুক্তিযোদ্ধা তাদের কোনই মূল্যায়ন হয়নি৷ আমার নিজের একটা বাড়ি নাই৷ ভাড়াবাড়িতে থাকি৷ আমি ট্যুইশনি করি, স্কুলে পড়ায় আবার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য