1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিজিটাল আর্কাইভে দেশভাগের ইতিহাস

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ মার্চ ২০২০

ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে দেশভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ডিজিটাল আর্কাইভ। সাধারণ মানুষের কাছে সদ্য উন্মুক্ত হয়েছে সেই মহাফেজখানা।

https://p.dw.com/p/3ZtYu
ছবি: Journey/R. Talukder

১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম অংশে অসংখ্য মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছেন। পাড়ি দিয়েছেন অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। সেখানে নতুন করে শুরু হয়েছে তাদের জীবন সংগ্রাম। এই বিষয়ে সাহিত্য থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় নানা সৃষ্টিমূলক কাজ হয়েছে। কিন্তু, তার বাইরেও রয়ে গিয়েছে দেশভাগ সংক্রান্ত অনেক স্মৃতি, স্মারক। মহাফেজখানার দলিলের বাইরে থাকা সেই জীবন্ত ইতিহাস দেশভাগের গবেষণায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা গত চার বছর ধরে সমীক্ষা করেছেন, পৌঁছে গিয়েছেন দুই বাংলার সীমান্তবর্তী গ্রামে। কথা বলেছেন দেশভাগের ফলে ভিটেহারা প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে। এর সঙ্গে সংগৃহীত হয়েছে নানা লিখিত উপাদান ও ছবি। সবটাই ধরা হয়েছে ডিজিটাল ফরম্যাটে। এই সংগ্রহশালা এখন খুলে গিয়েছে পৃথিবীর মানুষের কাছে।

অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যা অনুষদ। তার অধিকর্তা এবং সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ-এর কো-অর্ডিনেটর মননকুমার মণ্ডল এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন। তারপর একাধিক পর্যায় কাজ হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। শুধু তিনটি প্রতিষ্ঠান নয়, আরো অনেক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যুক্ত হয়েছেন এর সঙ্গে। তথ্য আহরণের কাজ করেছে ৫০ জন গবেষকের দল। তারা পৌঁছে গিয়েছে দুই দেশের জেলায় জেলায়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে স্মৃতিকথা সংগ্রহ করা হয়েছে। একইভাবে গবেষকরা পৌঁছে গিয়েছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরের প্রবীণদের কাছে। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে শুনেছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা।

‘বেঙ্গল পার্টিশন রিপোসিটরি' নামের ডিজিটাল সংগ্রহশালায় ইতিমধ্যেই নাম নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিনামূল্যে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে দেখে নেওয়া যাবে দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্ভার। ব্যক্তির স্মৃতির সঙ্গে রয়েছে চিঠিপত্র, গ্রন্থ, ডায়েরি, স্মৃতিচারণ সমৃদ্ধ লেখা, স্থিরচিত্র। মহাফেজখানার দলিলের বাইরে মৌখিক ইতিহাস, জনশ্রুতি, ব্যক্তিগত গল্প সংগ্রহ ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

প্রকল্পের হোতা অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল বলেন, "মূলস্রোতের বাইরে থাকা দেশভাগ সংক্রান্ত তথ্য তুলে আনাই ছিল ভাবনায়। সবটাই ডিজিটাল ফরম্যাটে নেওয়া হয়েছে। মূলত গল্প সংগ্রহ করাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। স্থানীয় স্তরে গবেষকদের দল গড়ে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কীভাবে এগোতে হবে। তাঁরা তৃণমূল স্তরে কাজ করেছেন।”

তপোধীর ভট্টাচার্য

এই প্রকল্পের অধীনে বক্তৃতামালার আয়োজনও করেছিল নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে বক্তৃতা করেছিলেন প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। এই প্রকল্প সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, "আমাদের ভবিষ্যৎ অনুমিত, অতীত কল্পিত। ইতিহাস চেতনার অভাব রয়েছে। তা দূর করার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ স্বাগত। যে সব সমকালীন উপন্যাসে স্মৃতির ছাপ রয়েছে, তার আবেগ বিধুরতা অধিকাংশ দেশবাসীর হৃদয়ে পৌঁছয়নি। তাই দেশভাগে ছিন্নভিন্ন মানুষের বয়ান তুলে আনা জরুরি। সেটা অনেক দেরি করে হলেও শুরু হয়েছে, এটা বড় কথা।”

এ মাসে আর্কাইভের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, "দেশভাগের যন্ত্রণা থাকলেও অনেকের সেই মর্মবেদনা বিস্মৃতির পথে চলেছিল। এনআরসি, সিএএ-র পরিপ্রেক্ষিতে দেশভাগের ইতিহাসকে ফের সামনে আনা জরুরি। আর্কাইভ সেই কাজ করবে। একই সঙ্গে এটা স্বাধীনতার পুনর্পাঠও। বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেটা ছিল একটা প্রতারণা, এই ইতিহাসও সামনে আসবে।”

অধ্যাপক মণ্ডল জানান, সংগৃহীত সব উপাদান অনলাইনে দেওয়া হয়নি। এমন অনেক স্পর্শকাতর বিষয় উঠে এসেছে, যা জনসমক্ষে তুলে ধরা সম্ভব নয়। সংগ্রহশালার অনেক উপাদান এমনও থাকছে, যাকে সূত্র হিসেবে বিবেচনা করে বৃহত্তর গবেষণার ক্ষেত্রে খুঁজে পেতে পারেন দুই বাংলার গবেষকেরা।